চিটাগুড় এর উপকারিতা লিখে শেষ করার মত না। এর বহু মুখী উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ রয়েছে। যেহেতু এটি চিনি শিল্পের প্রধান কাচামাল আখ বা ইক্ষু থেকে উৎপন্ন হয় সেহেতু এটিতে প্রচুর এনার্জি ও মিনারেল পাওয়া যায় যা গবাদিপশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও উৎপাদনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব তৈরি করে।

গবাদিপশু কে চিটাগুড় কেন খাওয়াবেন?

এটি সাধারণত সুইটনার হিসাবে আমরা গরুকে খায়িয়ে থাকি। অনেকেই এর পুষ্টি ও উপকারিতা ভালোভাবে জানি না। নিচে এর পুষ্টি সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া আছে। গরুকে নিয়মিত বা অনিয়মিত যে কোনো সময় যে কোনো ভাবে এটি খাওয়ানো যায়।

এটি গরুর মিনারেলের খাটতি পুরোন করে। শক্তি সরবরাহ করে। প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। উৎপাদন বৃদ্ধি করে। এর দাম তুলনামুলক কম হয়।

পুষ্টি

চিটাগুড় অনেক পুষ্টিকর একটি গো খাদ্য। এতে ২৫৭০ কিলোক্যালরি/কেজি শক্তি রয়েছে।

শুষ্ক পদার্থ ৭২.৩%
অপরিশোধিত প্রোটিন ৪.২%
অপরিশোধিত আঁশ ০
অপরিশোধিত চর্বি ১%
অ্যাস- ১০.৩%
এনডিএফ ০.২%
এডিএফ ০.১%
লিগনিন ০.১%
স্টার্চ ০%
মোট শর্করা ৪৫.৭%
গ্রোজ এনার্জি (Kcal) ২৫৭০ কিলোক্যালরি/কেজি

চিটাগুড় এর উপকারিতা

চিটাগুড় গবাদিপশুকে নিযোমিত খাওয়ালে অনেক প্রকার উপকার পাওয়া যায়। যেমন-

1. গবাদিপশুর উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
2. হকম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
3. খাদ্য খাওয়ার চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
4. মিনারেল বা খনিজের চাহিদা পুরোন হয়।
5. প্রজনন ক্ষেমতা বৃদ্ধি পায়।
6. তাপমাত্রা জনিত ধকল প্ররিরোধ করে।
7. ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের চাহিদা মেটায়।
8. গাভী গরুর বাচুর প্রশব সহজ হয়।
9. দ্রুত ওলানে দুধ আসে।
10. দুধের উৎপাদন সবসময় সঠিক থাকে।
11. নিয়মিত ডাকে আসে।
12. কন্সেভ রেট ভালো থাকে।

অপকারিতা

চিটাগুড় এর উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আছে। আমাদের অবশ্যই এর ক্ষতিকর দিকও জানা থাকা প্রয়োযন। নিম্নে কিছু অপকারিতা উল্লেখ করার হলো।

1. কৃমি মুক্ত না করা থাকলে কৃমির সংখ্যা বেড়ে যায় ও পাতলা পয়খানা করে।।
2. বেশি পরিমানে খাওয়ালে হজমে সমস্যা ও ফুড পয়জনিং হতে পারে।
3. এতে লেড সহ বেশ কিছু ভরি ধাতু থাকে যা বেশি পরিমানে গ্রহণ করলে প্রাণির শরীরে বিভিন্ন সমস্যা থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
4. উন্মুক্ত বা খোলা পাত্রে রাখলে ছত্রাক লেগে যায়। যা পরবর্তিতে ফুড পয়োজনিং হতে পারে।
5. পরিবহন সমস্যা হয়।

ব্যবহার

গবাদিপশুর খাদ্য হিসাবে চিটাগুড়ের ব্যবহার অনেক প্রাচিন। বর্তমানে এর ব্যবহার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে ও আধুনিক হয়েছে। নিম্নে এর কিছু ব্যবহার উল্লেখ করা হলো।

গবাদিপশু পালনে

1. সরাসরি তরল খাদ্য হিসাবে।
2. খর ও ঘাসের সাথে মিশিয়ে।
3. টিএমআর (টোটাল মিক্সড রেশিও) তৈরি করতে।
4. ইউএমএস (ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র) তৈরি করতে।
5. পিলেট ফিড তৈরি করতে।
6. সাইলেজ তৈরি করতে।

মাছ চাষে

মাছ চাষে মাছের খাদ্য তৈরিতে ও পুকুরের পানির গুনোগত মান ঠিক রাখতে চিটাগুড়ের ব্যবহার আদিকাল থেকে ও বিজ্ঞান সম্মত। মাছ চাষে এর বহুমুখি ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।

শেষকথা

উপরের আলোচনায় চিটাগুড় এর উপকারিতা ও পুষ্টি সম্পর্কে বেশ কিছু সাধারন তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি যা গাবাদিপশুর খামারিদের খাদ্য ব্যবস্থাপনা কে আরো উন্নত করবে। ধন্যবাদ।